History

১. প্রতিষ্ঠা ও নামকরণ :

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান-এর ঘনিষ্ট সহচর তাঁর জীবন ও মৃত্যুর সহযাত্রী মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থপতি, চার জাতীয় নেতার অন্যতম শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান নামে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটি রাজশাহী মহানগরের উত্তর জনপদে শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ প্রয়াস রাখছে। যার ফলশ্রুতিতে গত ৫ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ তারিখে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক কলেজটি পাঁচ তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের ভিত্তি ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এলাকার উচ্চ শিক্ষা প্রসারে নব দিগন্তের সূচনা হ‘ল।

কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৪ সালে। এ শিক্ষা মহানগরীতে বেসরকারী উদ্যোগে একটি যুগোপযোগী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার স্বপ্ন নিয়ে এলাকার কিছু উদ্যোগী তরুণ ও কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি একত্রিত হন। এপর্যায়ে কলেজ স্থাপনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২৪ জুন,১৯৯৪ তারিখে প্রথম সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে নামটি ছিল হাউজিং এস্টেট মহাবিদ্যালয় এবং শুভ যাত্রার শুরুটি ছিল উপশহর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রায় পরিত্যাক্ত ভবনকে সংস্কার করে ক্লাশ রুমের উপযোগী করার মধ্য দিয়ে। পরবর্তীতে কলেজটি নিজস্ব জমিতে স্থানান্তর হয় অর্থাৎ রাজশাহী মহানগরী উপশহর সেক্টর-১ এ ১৯৯৫ সালে স্থায়ীভাবে রাজশাহী হাউজিং এস্টেটে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ৩১.১৩ কাঠা দলিল মূলে প্রদান করা নিজস্ব জমিতে এবং কলেজের নিজস্ব ব্যয়ে নির্মিত সাত কক্ষ বিশিষ্ট একতলা ভবনে। প্রতিষ্ঠা লগ্নে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন উপশহরের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী এ্যাডভোকেট জিল্লুর রহমান ও সমাজসেবী আবুল কালাম আজাদ। উপরন্ত কলেজটির সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজশাহীর উত্তর জনপদে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের মহান প্রচেষ্টাকে সফল করার উদ্দেশ্যে সেদিন সর্বাত্মক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন উপশহর তথা রাজশাহীর প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ।

কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্য সদস্যদের প্রস্তাব ও অনুমোদনে রাজশাহী সরকারী কলেজের প্রাক্তন ইংরেজী বিভাগের সদ্য অবসর প্রাপ্ত প্রবীন অধ্যাপক ইউনুস আলীকে ০৮-০৭-১৯৯৪ তারিখে কলেজের সর্বপ্রথম অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়। এরপর কলেজের গভর্ণিং বডি মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ২৭-০৯-১৯৯৪ তারিখে ২৯ জন শিক্ষক ও কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান করে। প্রতিষ্ঠা লগ্নেই মহাবিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে মানবিক, বিজ্ঞান ও বানিজ্য শাখা খোলা হয়। এদিকে যোগদান করা শিক্ষকবৃন্দ পাঠদান থেকে শুরু করে কলেজের সার্বিক উন্নতির লক্ষ্যে অদ্যাবধি তাদের অক্লান্ত শ্রম ও মেধার প্রয়োগ করে চলেছেন। ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষা বর্ষে নবাগত উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের উদ্ভোধনী কøাশের মধ্য দিয়ে পাঠ দান কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিমধ্যে ১১-০১-১৯৯৫ তারিখে কলেজটি রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির প্রাথমিক অনুমোদন পায়। কাল পরিক্রমায় পরবর্তী ধাপে রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক কলেজটি পরিদর্শন সাপেক্ষে ২৪-০৮-১৯৯৫ তারিখে স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। এর পর ১ জানুয়ারী, ১৯৯৭ সালে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীগণ এমপিও ভূক্ত হন।

১৯৯৭ সালে কলেজ গর্ভণিং বডি এক সভায় কলেজটির হাউজিং এস্টেট মহাবদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও চার জাতীয় নেতার অন্যতম শহীদ এ. এইচ. এম কামারুজ্জামানের নামে কলেজটির নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য যে, উক্ত সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক জিন্নাতুন নেসা তালুকদার এম. পি। এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তৎকালীন ডাক, তার এবং গৃহায়ন ও পূর্তমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নতুন নামে ১৮ অক্টোবর, ১৯৯৭ তারিখে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে এক শুভ অধ্যায়ের সূচনা করেন। উল্লেখ্য যে, শহীদ এ. এইচ. এম কামারুজ্জামানের সুযোগ্য পুত্র সাবেক রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন ২১-০৫-২০০০ তারিখে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসাবে কলেজের গর্ভাণিং বডিতে আসেন এবং কলেজকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নেন। ইতিমধ্যে কলেজটি এমপিও ভূক্ত হয়ে যাওয়ায় বর্ষিয়ান অবসর প্রাপ্ত অধ্যাপক ইউনুস আলী অধ্যক্ষ পদটি ছেড়ে দেওয়ায় উক্ত পদে মোঃ মনিরুল ইসলাম ২৩-০৭-১৯৯৮ তারিখে নিযুক্ত হন। কিছুকাল তিনি উক্ত পদে বহাল থাকেন। পরবর্তীতে কলেজের গর্ভণিং বডি কলেজেটিকে ডিগ্রি পর্যায়ে উন্নীত করার লক্ষ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক ২৫-০৬-২০০২ তারিখে ডিগ্রি পর্যায়ে পাঠদানের লক্ষ্যে ১৭ টি বিষয়ে প্রভাষক নিয়োগ করা হয়। এরপর ৩১-০৭-২০০৭ তারিখে জাতীয় বিশ্ববিদ্যলয় হতে ২০০৭-২০০৮ শিক্ষাবর্ষে প্রথমত: ০৬ টি বিষয় অধিভূক্তি লাভ করে। ইতিমধ্যে রাজশাহীর দানশীল ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিদের সহযোগীতা ও আর্থিক আনুকুল্লে এ সময়ে পাঁচতলা ভিত্তি বিশিষ্ট সাত কক্ষের একটি একতলা একাডেমিক ভবন নির্মিত হয়।

কালের পরিক্রমায় ০৭-০৯-২০০৯ তারিখে রাজশাহী সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব ফজলে হোসেন বাদশা কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি পদে আসেন। ইতিমধ্যে ০৫-০৫-২০১০ তারিখে মুহম্মদ আবদুস সাত্তার অধ্যক্ষ পদে নিযুক্ত হন। এর কিছুকাল পর একই কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ আব্দুল খালেক উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। সভাপতি সাহেবের সঠিক নির্দেশনা ও আন্তরিক প্রয়াস, অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ এবং শিক্ষকবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কলেজটি এক নতুন মাত্রা প্রাপ্ত হয়। যার ফলশ্রুতিতে কলেজের সুখ্যাতি চর্তুদিকে ছড়াতে থাকে। ইতিমধ্যে ০৫-০৫-২০১১ তারিখে কলেজটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় হতে আরো ০৫ টি বিষয়ে ২০১০-১১ সেশন থেকে অনুমতি লাভ করে। এক পর্যায়ে মাননীয় সভাপতি জনাব ফজলে হোসেন বাদশার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্যক্তির নামে কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে ১৫,০০,০০০/= (পনের লক্ষ) টাকার অনুদান দেখাতে হয় ‘শহীদ এ.এইচ.এম কামারুজ্জামান একজন জাতীয় ব্যক্তিত্ব’ বিধায় এ বিবেচনায় বাংলাদেশ শিক্ষামন্ত্রণালয় উক্ত টাকার অনুদান মওকুফ করে দেয় ।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড কলেজটিতে ২০১২ সাল হতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপন করছে। ইতিমধ্যে ২০১২-১৩ শিক্ষা বর্ষ থেকে ১৫ টি বিষয় নিয়ে বিএ, বিএসএস ও বিবিএস ডিগ্রি কোর্স চালুর মাধ্যমে প্রায় ২০০০ জন শিক্ষার্থী এবং অধ্যক্ষ সহ ৫৫ জন শিক্ষক ও ১২ কর্মচারী নিয়ে গৌরবদীপ্ত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্ব মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এবার মহাবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভায় সভাপতি মাননীয় সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা কলেজ জাতীয়করণের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এ প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে জাতীয়করণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সর্বপরি সভাপতি মহোদয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে প্রেরিত স্মারক নং (পত্র সংখ্যা) -০৩.০০১.০০০.০০.০০.০৬.২০১৩-৭০ তারিখঃ ২৭ শে অক্টোবর, ২০১৩ খ্রিঃ, ১২ কার্তিক, ১৪২০ বঙ্গাব্দ অনুযায়ী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী মহাবিদ্যালয়টি জাতীয়করনের লক্ষ্যে সানুগ্রহ সম্মতি প্রদান করেছেন।

কলেটি গত ০৮/১০/২০১৫ তারিখ জাতীয়করণ হয়েছে।